Notification texts go here Contact Us

ভবনের ওয়ালে কেন নোনা ধরে, এর সমাধান কি?

ভবনর ওয়ালে কেন নোনা ধরে, এর সমাধান কি?

প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের জানাবো বিল্ডিংয়ের ওয়াল এ কেন নোনার সৃষ্টি হয়। নোনা দূর করতে কি কি করতে হবে। বিস্তারিত থাকবে আজকের প্রতিবেদনে। 

জেনে নিন ভবনের দেয়ালে নোনা ধরলে যা করবেন।



প্রায় ভবনের দেয়ালেই নোনা ধরতে দেখা যায়। যে রং করা হোক না কেন, তার ওপর হালকা থেকে গাঢ় সাদা রঙের আস্তরণ পড়ে। এই নোনা ধরার ফলে ইট বা পাথরের তৈরি দেয়ালে সাদা সাদা লবণের অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়। যা দেয়ালের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নেই সেসব উপায় বা কৌশল সম্পর্কে-

 নোনার লক্ষন কেমন?

 প্রথম প্রথম দেয়াল ঘেমে যেতে থাকে বা ভেজা ভেজা ভাব চলে আসে। এর কিছুদিন পর দেয়ালে সাদা সাদা আস্তরণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে সাদা লবণের ভারি আস্তরণ দেখা দেয় এবং প্লাস্টার ঝরে পড়তে থাকে।

নোনা ধরার কারন সমূহ কি কি?

 নোনা ধরার কারণসমূহ নিম্নরূপ-

. ভবন নির্মাণে কম পোড়ানো ইট ব্যবহার।

২. যে মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হয়, সে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি।

৩. বাড়ি তৈরির উপকরণ, যেমন- বালি, সিমেন্ট, পানি প্রভৃতির মধ্যে লবণের পরিমাণ ২.৫% এর বেশি।

৪. সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাব।

৫. দেয়ালের মাঝের পানির লাইনে ছিদ্র থাকা।

৬. প্লাস্টার শুকানোর আগেই রং করে ফেলা।

৭. গাঠনিক ত্রুটি

৮. ঘরের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাব।

৯. মেঝে এবং ঘরের মাঝের দেয়ালে সঠিকভাবে সিক্ততা স্তর না দেওয়া।

নোনা রোধে কি কি করনীয়? 

 ভবন নির্মাণের আগেই নোনা ধরার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নোনা ধরার মূল কারণ নির্মাণ সামগ্রী আর নির্মাণ প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তবে সাধারণত দুটি উপায়ে নোনা প্রতিরোধ করা যায়-


স্বাভাবিক উপায়: প্রথমত সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। তাই বাড়ি নির্মাণের আগেই সে স্থানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বাড়ির চারপাশে ভালো ড্রেন স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন পানি জমে না থাকে। ছাদে সঠিক ঢাল রাখতে হবে, যাতে বৃষ্টির পানি তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া বৃষ্টির ঝাপটা থেকে রক্ষার জন্য দেয়ালে সানশেডের প্রয়োজন। ইটের পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই বেশি। ফলে বৃষ্টির পানি থেকে দেয়ালকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। ইটের গাঁথুনির ফ্লাশ পয়েন্টিং করলে অতিরিক্ত পানি দেয়ালের গায়ে জমা হতে পারে না। অনেক সময় ছিদ্রযুক্ত দেয়াল দিয়েও আর্দ্রতা দূর করা যায়।


দ্বিতীয়ত প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচলের মাধ্যমে নোনা রোধ করা যায়। ঘরের মাঝে সব দেয়ালে সমানভাবে রোদের আলো প্রবেশ করতে পারে না, সেক্ষেত্রে নকশা তৈরির সময়ই যেসব দেয়ালে রোদের আলো কম পড়ে; সেসব দেয়ালে সঠিকভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে বৃষ্টির পানি আর রোদের অভাবে দেয়ালটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে নোনা ধরার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই সূর্যতাপ এবং বাতাস চলাচলের উপর নির্ভর করে নির্মাণ করতে হবে ভবন।


কৃত্রিম উপায়: এক্ষেত্রে প্রথমত গাত্রক পানি নিরোধক ব্যবস্থার মাধ্যমে রোধ করা যায়। এ ব্যবস্থা দু’ভাবে হতে পারে, যেমন- বাইরের দিকের গাত্র এবং ভেতরের দিকের গাত্র। যেহেতু বাইরের দিক থেকেই পানি বুনিয়াদ বা কাঠামোতে প্রবেশ করে। সেজন্য বাইরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থা ভেতরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থার চেয়ে বেশি কার্যকরী। বাইরের দিকের গাত্রের সিক্ততা নিরোধ করার সহজ ব্যবস্থা হচ্ছে, ইটের জোড়ায় মুখগুলো খুলে পয়েন্টিং করা এবং পরে ভালো করে প্লাস্টার করা। ভেতরের দিকে প্লাস্টারের ওপর সাধারণত মোম বা সিলিকেট দ্রবণ লাগানো হয়। তবে এ ব্যবস্থা ২-৩ বছর পরপর করতে হবে।


দ্বিতীয়ত পানি নিরোধক আচ্ছাদন সংযোজনের মাধ্যমেও রোধ করা যায়। বিটুমিন শিট, প্লাস্টিক শিট, মেটাল শিটের মাধ্যমে পানি প্রতিরোধী একটি স্তর গড়ে তোলা হয়।


প্রতিকারের উপায়: ভবন নির্মাণের পর নোনা দেখা যাওয়া আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বেশ কমন। একে তো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বছরজুড়ে; সেই সাথে নির্মাণের সময়ে সতর্কতার অভাব। শখের বাড়িতে নোনা ধরে গেলে সেটা প্রতিকারের ব্যবস্থা করার কিছু উপায় রয়েছে।


হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) ভবনের নোনা ধরা প্রতিকারের জন্য এইচবিআরআই-এসপি এবং এইচবিআরআই-ডিপি নামে দুটি দ্রবণ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এদের ব্যবহারবিধি নিচে দেওয়া হলো-

১. ভবনের যেসব স্থানে নোনা দেখা দিয়েছে; সেসব জায়গার রং, চুন ইত্যাদির প্রলেপ ভালোভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।


২. আক্রান্ত স্থানে এইচবিআরআই-এসপি তিন-চার বার এমনভাবে লাগাতে হবে, যেন বালি-সিমেন্টের আস্তরণটি সম্পূর্ণভাবে ভিজে যায়। একদিন অপেক্ষা করার পর এইচবিআরআই-এসপি লাগানোর স্থানসমূহ পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ভেজা আস্তরণকে ভালোভাবে শুকানোর পর চুনকাম, রং, ডিসটেম্পার ইত্যাদি প্রলেপ দিতে হবে।


৩. ভবনের যেসব স্থানে এইচবিআরআই-ডিপি প্রয়োগ করতে হবে; সেসব জায়গার রং, চুন, পুটিং ইত্যাদির প্রলেপ ভালোভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। শুকনো আস্তরণে এইচবিআরআই-ডিপির দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হয়। ৩ ঘণ্টা পর ৩-৪ বার এইচবিআরআই-ডিপি দ্রবণের আস্তরণ প্রয়োগ করতে হবে। একদিন পর পানি দিয়ে অতিরিক্ত এইচবিআরআই-ডিপি সরিয়ে ফেলতে হবে। ভালোভাবে শুকানোর পর চুনকাম, রং, ডিসটেম্পার ইত্যাদির প্রলেপ দিতে হবে। অর্থাৎ একই উপায়ে প্রয়োগ করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী।

পরিশেষে ঃ-

ভবনের নোনা হলো দ্রবণীয় লবণের দ্রবণ হতে পানির বাষ্পীভবনের ফলে ভবনের দেয়ালে লেপ্টে থাকা লবণের অধঃক্ষেপ। সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে আর্দ্র জলবায়ু, প্রবল বৃষ্টিপাত ও গাঁথুনিতে জমা পানির প্রভাবেই নোনা ধরে। নোনা ধরার ফলে অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, ছোপ ছোপ দাগ প্লাস্টার এমনকি চুনকামেও ঢাকা পড়ে না। নোনার সংস্পর্শে কাগজপত্র, কাপড়-চোপড়, কাঠ ইত্যাদি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। প্লাস্টার নরম হয়ে খসে পড়ে। সর্বোপরি ভবনের সৌন্দর্যহানী ঘটে।


তাই নোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা ভবন তৈরির অংশ বলে গণ্য করা উচিত। আমাদের দেশের আবহাওয়াজনিত কারণে নোনা ধরা সমস্যাটি বহুলভাবে দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের ভবন নির্মাণের আগে সতর্ক হওয়া জরুরি।

Getting Info...

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.