আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন আপনার?আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালোই আছেন।
আজ আমরা আমাদের দেশের শীর্ষ ১০ টি ঔষধ কোম্পানি সম্পর্কে জানতে চলছি।
একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যেত। ধীরে ধীরে এই অবস্থার অনেক উন্নতি সাধন হয়ছে। কারণ এখন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ওষুধ আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশেই আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ তৈরি হচ্ছে।
Medicines |
বিদেশের ওপর নির্ভরশীল কমিয়ে আমাদের দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়
এখন আমি বাংলাদেশের সেরা ১০টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সম্পর্কে আপনাকে জানাচ্ছি।
তবে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যে কয়েকটি খাতে এগিয়েছে তার মধ্যে ওষুধ খাত অন্যতম। বর্তমানে দেশে অনেক বড় বড় ওষুধ কোম্পানি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ওষুধ রপ্তানি করছে।
চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই আমাদের দেশের শীর্ষ ১০ ঔষধ কোম্পানি সম্পর্কে।
১। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯৫৬ সালে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার তিন বন্ধু এই কোম্পানিটি শুরু করেন, কিন্তু শুরুতে এটি একটি বেসরকারি কোম্পানি ছিল।
১৯৯১ সালে, তারা তাদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট শেয়ার খুলে পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হয়। ঢাকার মহাখালীতে স্কয়ার কোম্পানির হেড অফিস। স্কয়ার অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক ও তৈরি করে থাকে।
স্কয়ার কোম্পানি আমাদের সারাদেশে চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি তারা বিশ্বের ৩৬টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকেন ।স্কয়ারের বর্তমান বাজার মূলধন ১.৭ বিলিয়ন ডলার। তাদের নিট আয় প্রতি বছর ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের পুরো কর্মকর্তা ও কর্মী সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় হাজার জন।
২। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
Incepta Ltd সাধারণত জেনেরিক ওষুধ তৈরি করে। ১৯৯৯ সালে ইনসেপ্টা একটি প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে।ইনসেপ্টার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ইনসেপ্টার হেড কোয়ার্টার। ইনসেপ্টার দুইটি উৎপাদন কেন্দ্র আছে। একটি সাভারে এবং অন্যটি ধামরাই এলাকায়। ইনসেপ্টা শুরুর দিকে তারা শুধু বাংলাদেশের জন্য ওষুধ তৈরি করলেও এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে সারা বিশ্বে পণ্য সরবরাহ করে আসছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইনসেপ্টা অনেক উন্নতমানের ওষুধ তৈরি করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে তারা একটি জার্মান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সাথে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ইনসেপ্টা একটি স্থানীয় কোম্পানির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষকও ইনসেপ্টা।
৩। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
আমাদের তালিকায় ৩য় নাম্বার কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস বেক্সিমকো ফার্মা নামেও পরিচিত।
যদিও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এর কার্যক্রমের তারিখ ১৯৮০।
বেক্সিমকো হল প্রথম বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি যা মার্কিন বাজারে ওষুধ রপ্তানি করেছে।
এছাড়াও তারা তাদের ব্র্যান্ডের অধীনে বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তাদের নিজস্ব কোম্পানিতে তৈরি করে থাকে।
এর মধ্যে রয়েছে এইডস, ক্যান্সার, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।ঢাকার ধানমন্ডিতে বেক্সিমকোর সদর দপ্তর এবং এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।
২০১৬ সালের তথ্য অনুসারে, বেক্সিমকোর মোট আয় ৮২২.৭ বিলিয়ন, এবং নিট আয় বার্ষিক ৩৩ বিলিয়ন। বর্তমানে বেক্সিমকো তে মোট ৪৫২৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়াও, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি দেশের সব চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য দেশে ওষুধ রপ্তানি করেছে।
৪। অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড
১৯৫৬ সালে আবদুল খালেক খান অপসোনিন ফার্মা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই কোম্পানির সদর দপ্তর ঢাকার ৩০ নিউ ইস্কাটন এলাকায়।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল মার্কেটিং সার্ভিসেস, হেলথ বা আইএমএস হেলথের মতে, অপসোনিন বিক্রয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।
কম খরচে ভালো ওষুধের কারণে অপসোনিন ফার্মার নাম দাম রয়েছে।এই কোম্পানিতে বর্তমানে ৩৫০টি ব্র্যান্ডের ৮০০টি পণ্য তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশের বাইরে তারা ২৫টি বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করে আসছে। অপসোনিন ফার্মার বর্তমান স্টাফ সংখ্যা প্রায় ৬৫০০ জন এবং তাদের সম্মিলিত আয় প্রায় ১১ বিলিয়নের বেশি।
৫। রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
১৯৯৩ সালে রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি আগে ফাইজার ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড নামে পরিচিত ছিল।
মানুষের ওষুধ তৈরির পাশাপাশি তারা পশুর ওষুধও তৈরি করে থাকে।রেনাটা বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির একটি।
রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস পশুচিকিৎসা ছাড়াও পশুদের জন্য পুষ্টিকর পণ্যও তৈরি করে থাকে। এছাড়াও, রেনাটা হরমোন, স্টেরয়েড এবং সাইটোটক্সিক ওষুধ তৈরি ও রপ্তানি করে আসছে।
রেনাটার বর্তমান প্রধান নির্বাহী হলেন সৈয়দ এস কায়সার কবির। ঢাকার মিরপুরে রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালসের সদর দপ্তর। সব মিলিয়ে বর্তমানে মোট ৩৪৭৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন।
৬। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
Eskayef ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।
SKF ফার্মাসিউটিক্যালস SK+F নামেও পরিচিত। বর্তমানে সিমেন রহমান এসকেএফের প্রধান নির্বাহী।এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ট্রান্সকম কোম্পানির একটি অংশ। ১৯৯০ সালে এই কোম্পানি টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এসকেএফ ফার্মা মানুষের ওষুধ ছাড়াও, তারা থেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ তৈরি করে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর ওষুধ, পুষ্টিকর পরিপূরক ইত্যাদি।
এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের সদর দপ্তর ঢাকার গুলশানে।বর্তমানে বিশ্বের ২১টি দেশে তারা ওষুধ রপ্তানি করছে চলছে।
৭। একমি ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশ
Acme বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। ১৯৫৪ সালে জনাব হামিদুর রহমান সিনহা হাত ধরে এই কোম্পানির পথ চলা।
বর্তমানে তারা ৫০০টিরও বেশি ধরণের পণ্য তৈরি এবং বিক্রি করে আসছে।
প্রথম দিকে তাদের কোম্পানি ঢাকার নারায়ণগঞ্জে থাকলেও পরে তারা কল্যাণপুর এলাকায় চলে যায়। বর্তমানে একমিতে ৮ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা মানুষের ওষুধের পাশাপাশি ভেটেরিনারি মেডিসিন, ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক ওষুধও তৈরি করছে।
৮। এসিআই বাংলাদেশ লিমিটেড
অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) একটি শিল্প গ্রুপ।
১৯৯২ সালে,এসিআই বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস, রাসায়নিক, ভোগ্যপণ্য, খাদ্য পণ্য এবং ইলেকট্রনিক্স সহ একসাথে অনেকগুলি পণ্য তৈরি করে আসছে।
এসি আই কোম্পানি একটি পাবলিক কোম্পানি এবং চেয়ারম্যান জনাব এম আনিসউদ্দৌলা।
এসিআই কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় ১০০০০ জন লোক নিযুক্ত রয়েছে এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মোট বিক্রয় ছিল প্রায় ৮০০২৬ কোটি টাকা।
৯। অ্যারিস্টোফার্মা লিমিটেড
অ্যারিস্টোফার্মা বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি ওষুধ কোম্পানির একটি।
এরিস্টোফার্মা ১৯৮৬ সালে মানসম্পন্ন ওষুধ বাজারে এনে যাত্রা শুরু করেন।
বর্তমানে দেশে সব ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির চিকিৎসা সামগ্রী তৈরি কর চলছে তারা। তারা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৩৪টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে চলছে।
এদের মোট ২০০+ ব্র্যান্ডের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়।অ্যারিস্টোফার্মা বর্তমানে ৬০০০জন লোক তাদের অধীনে কাজ করে চলছে ।
ঢাকার পুরাতন পল্টন এলাকায় এরিস্টোফার্মার সদর দপ্তর এবং চেয়ারম্যান হাসান কর্পোরেশনের মালিক এম এ হাসান।
১০। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
১৯৮৪ সালে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল 1984 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করেছিল।
তারপর তারা তাদের পণ্য তৈরি করতে শুরু করে।
ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি যারা সফট ক্যাপসুল চালু করেছে।
ডাঃ এম এম আমজাদ হোসেন ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন এম এ হায়দার হোসেন। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল বর্তমানে ৫০০০ এরও বেশি লোক কাজ করছে।
ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল ভেষজ ও ইউনানি ওষুধের পাশাপাশি মানসম্মত প্রচলিত ওষুধ তৈরি করে আসছে।
উপসংহার:-
বর্তমানে বাংলাদেশে আড়াই শতাধিক নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি রয়েছে।আমরা এই কোম্পানিগুলির অনেকের নাম জানি এবং ইতিমধ্যে তাদের সম্পর্কে শুনেছি।
এই নিবন্ধে, আমরা পরিষেবা, সুনাম, ইত্যাদি এবং বিভিন্ন সমীক্ষার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে শর্টলিস্ট করেছি। আশা করি, এটি লেখার পর বাংলাদেশের সেরা ওষুধ কোম্পানিগুলো সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা আছে।